Top News

আশা – এক নতুন ভোরের গল্প

 অনেক বছর আগের কথা। ছোট্ট একটি গ্রাম, ঘন বন আর পাহাড়ে ঘেরা। সেই গ্রামের নাম ছিলো চন্দনপুর। চন্দনপুর গ্রামটি বেশ সরল আর নিরিবিলি। কিন্তু একটা ব্যাপার সবাইকে কষ্ট দিত – বছরে প্রায়ই বন্যা হত। এই বন্যা গ্রামের ঘর-বাড়ি, ফসল, গবাদি পশু সব ধুয়ে নিয়ে যেত। গ্রামের মানুষেরা সব সময় আতঙ্কে থাকত, কখন আবার বন্যা আসবে।


এই গ্রামে একটা ছোট্ট ছেলে ছিল, তার নাম ছিলো দীপু। দীপুর বয়স তখন মাত্র দশ বছর। কিন্তু তার মনে ছিল অন্যরকম একটা সাহস আর আশার আলো। দীপু দেখতে পেত তার মা-বাবার দুশ্চিন্তা, গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের উদ্বেগ। কিন্তু সে কখনো হাল ছাড়ত না। তার বিশ্বাস ছিল – একদিন এই বন্যার শেষ হবে, আবার শান্তির দিন আসবে।


একদিন, দীপু গ্রামবাসীদের ডেকে বলল, "আমরা সবাই মিলে একটা বাঁধ তৈরি করি। তাহলে বন্যার পানি সহজে আমাদের গ্রামে আসতে পারবে না।" প্রথমে অনেকেই হাসাহাসি করল, কারণ এমন কাজ করার সাহস এবং পরিকল্পনা তাদের ছিল না। কিন্তু দীপুর চোখে একরকম দৃঢ় আশা ছিল, যা তাদেরকে সাহস দিল।


তারপর শুরু হলো এক বড় কাজ। সবাই মিলে গ্রামে চারপাশে মাটি দিয়ে একটা মজবুত বাঁধ তৈরি করল। মাটি, পাথর, গাছের ডাল – যা যা পেয়েছিল, সব কিছু দিয়েই তারা বাঁধটা তৈরি করল। কাজ করতে করতে কয়েক মাস পার হয়ে গেল। অবশেষে বাঁধটা তৈরি হয়ে গেল।


এরপর যখন বর্ষা এলো, সবাই খুব ভয় পেয়েছিল। কিন্তু তাদের তৈরি করা বাঁধটি সত্যিই তাদের গ্রামকে রক্ষা করল। গ্রামের ঘর-বাড়ি, ফসল, গবাদি পশু, সবই রক্ষা পেল। গ্রামবাসীরা দীপুর প্রশংসায় মুখর হল, তারা দীপুর দৃঢ় আশা এবং সাহসের কথা সবাইকে বলতে লাগল।



এই ঘটনাটা গ্রামের সবার জীবনে এক নতুন আলোর পথ দেখিয়েছিল। সবাই শিখেছিল, যদি মন থেকে চেষ্টা করা যায় আর আশাকে আকড়ে ধরা যায়, তাহলে কোনো বাধাই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। দীপু সেই গ্রামের জন্য একটা নতুন সকাল নিয়ে এসেছিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post