বাংলাদেশের ইতিহাস: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ, তার গৌরবময় ইতিহাসের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই ভূখণ্ডের ইতিহাসে রয়েছে হাজার বছরের সংগ্রাম, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং একটি স্বাধীন জাতির গঠন।
প্রাচীনকাল:
বাংলাদেশের ইতিহাস শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকে। প্রাচীন বঙ্গ ছিল একটি সমৃদ্ধ ও বাণিজ্যিক অঞ্চল। এটি মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। পাল সাম্রাজ্য (৭৫০-১১৭৪ খ্রিস্টাব্দ) বৌদ্ধধর্মের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং শিল্প, স্থাপত্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সোনালী যুগ হিসেবে পরিচিত।
মধ্যযুগ:
মধ্যযুগে বঙ্গ অঞ্চল মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে। ১৩শ শতাব্দীতে দিল্লি সালতানাতের অধীনে এবং পরে স্বাধীন সুলতানদের শাসন শুরু হয়। মুঘল শাসন বাংলার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকাকে ১৬০৮ সালে সুবাহ বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা পরবর্তীতে মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
ঔপনিবেশিক যুগ:
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসন গ্রহণ করে। ব্রিটিশ শাসনকাল ছিল অত্যাচারী এবং শোষণমূলক। কৃষি, শিল্প এবং সংস্কৃতির উপর ব্রিটিশদের আরোপিত নীতিগুলি বাংলার মানুষের দারিদ্র্য ও ক্ষোভ বৃদ্ধি করে।
ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার ভিত্তি:
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পাকিস্তানের অংশ হয়। তবে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবন দেওয়া সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত প্রমুখের আত্মত্যাগ আজও বাঙালির চেতনার অংশ।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা:
১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। ২৫ মার্চের গণহত্যা এবং ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালির জন্য স্বাধীনতার পথ খুলে দেয়। ভারতের সহযোগিতায় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা:
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তবে জাতি তার সংকল্প, কঠোর পরিশ্রম এবং ঐক্যের মাধ্যমে এগিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের ইতিহাস শুধুমাত্র সংগ্রামের নয়, বরং এটি একটি গৌরবময় উত্তরাধিকার এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এই ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যৎকে নির্মাণের জন্য অনুপ্রেরণা যোগায় এবং বাঙালির জাতীয় পরিচয়কে শক্তিশালী করে।
Post a Comment